রবীন্দ্র স্মরণ

দুইশত বছরের
ভিনদেশী গোলামী থেকে মুক্তি পেতে আমরা দারস্থ হয়েছিলাম ধর্মীয় আবরণে মোড়া অলীকস্বাধীনতায়। আমাদের সে স্বপ্ন তাসের ঘরের মত চুরমার হয়ে গিয়েছিল যখন আমাদের আচার, সংস্কৃতি, ভাষা, রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বাস-এর উপর আঘাত এসেছিল। আমাদেরকে এমনও পরামর্শ দেয়া হয়েছিল যেন আমরারবীন্দ্রনাথের প্রচলিত লেখাগুলো চর্চা না করে, নিজেরাই রবীন্দ্রসংগীত লিখে নেই।

আমাদের জাতীয় মানস থেকে শুরু করে স্বাধীনতার চেতনা গঠনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদানঅপরিসীম। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজয় অর্জনের পরে আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে রবীন্দ্রনাথকেস্থাপন করি। চর্চায়, মননে, মানসে শুভ
প্রয়াসের শুরু হয়। কিন্তু আজ? বর্তমান সমাজ? নতুন প্রজন্ম?

বঙ্গবন্ধু
হত্যাকান্ড কিংবাস্বাধীনতা বিরোধীদের পুর্নবাসন থেকে শুরু করে উদীচী-রমনার
বটমূল-ময়মনসিংহেপ্রেক্ষাগৃহে বোমা
হামলা, প্রায় সব জেলা শহরে একযোগে
বোমা হামলা, জঙ্গিবাদের উত্থান
কিংবা হালআমলের হলি আর্টিসান, শোলাকিয়া হামলা কিংবা ক্ষমতার
দাপটে অন্ধ হয়ে শিশু ও নারী নির্যাতন, সংখ্যালঘুনির্যাতন…সবক্ষেত্রেই
আমরা আমাদের জাতীয় চেতনার, সাংস্কৃতিক আদর্শ এমনকি স্বাভাবিক মানবিকবিবেচনা থেকে বিচ্যুত হয়েছি।

এই রকম (শ্বাসরুদ্ধকর)
পরিবেশের মাঝেও মুক্তবুদ্ধির চর্চা থেমে থাকেনি। বাংলাদেশে অন্যান্য সাংস্কৃতিকআন্দোলনের কর্মীদের মত বাচিক শিল্পীরাও
এই প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত রেখেছেন। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ারপর থেকে স্রোত আবৃত্তি সংসদআবৃত্তিকে হাতিয়ার করে নিয়ে
যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমাজের অসংগতি, অবক্ষয়এবং বোধহীনতার বিরুদ্ধে।

সেই ধারাবাহিকতায়, সমাজে রাবীন্দ্রিক চেতনা
ছড়িয়ে দিতে, কোমলমতি শিশুমানসে
রবীন্দ্র কবিতা প্রোথিতকরতে বিগত
বছরের ন্যায় স্রোত আবৃত্তি সংসদএবারেও আয়োজন করেছে আন্তঃবিদ্যালয় রবীন্দ্র কবিতাআবৃত্তি
প্রতিযোগিতা-২০১৭শীর্ষক অনুষ্ঠান। এ মহান কর্মযজ্ঞের প্রাথমিক পর্যায়ে, দুটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে, ঢাকা শহরের প্রখ্যাত দশটি
স্কুলের (পাঁচ) শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে। প্রাথমিক পর্যায়ে উর্ত্তীণ প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান
অধিকারীদের নিয়ে গত ১২ আগস্ট ২০১৭ তারিখ অনুষ্ঠিত হয় চূড়ান্ত পর্ব।

এই আয়োজনের পথচলায়
আমরা খুঁজে এনেছি কবিতা অন্তঃপ্রান, প্রানোচ্ছল একদল শিশুকে। যারা হতে পারেআমাদের ভবিষ্যৎ শিল্পী, যোদ্ধা, পেশাজীবি। আমরা বিশ্বাস করি,আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের
সুস্থ মানুষ হয়েবেড়ে ওঠায়, আমরা কিছুটা হলেও অবদান রাখতে
পেরেছি।

এ কর্মযজ্ঞেপ্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে দেশের
প্রখ্যাত আবৃত্তিকারগণ তাদের ব্যস্ততম সময় প্রদানকরেছেন, তাদের আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। অংশগ্রহনকারী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
অধ্যক্ষ/প্রধান সহসংশ্লিষ্ঠ সকল
শিক্ষককে আমাদের অশেষ ধন্যবাদ।

আন্তঃবিদ্যালয় রবীন্দ্র কবিতা
আবৃত্তি প্রতিযোগিতা-২০১৭এর মাধ্যমে আমরা রবীন্দ্র স্মরণপালন করতেচেয়েছি। প্রাথমিক
পর্যায় ও চূড়ান্ত পর্যায়-এ বিজয়ী প্রতিযোগীদের মধ্যে সনদ ও পুরষ্কার বিতরন
অনুষ্ঠানেআমরা আয়োজন করেছি স্রোতের
দর্শক নন্দিত প্রযোজনা হিং টিংছট

স্রোত আবৃত্তি সংসদআন্তঃবিদ্যালয় কবিতা আবৃত্তি
প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে ২০১৬ সাল থেকে। এআয়োজন
অব্যাহত থাকবে ভবিষ্যতেও।